আমর প্রতিনিয়ত নানাভাবে শক্তি ব্যবহার করি। যানবাহন, কলকারখানা, পানির পাম্প, ফ্যান, রান্নার কাজ সবকিছুতেই শক্তির প্রয়োজন হয়। শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না। আমরা যখন কারখানায় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি সচল রাখি, গাড়ি চালাই অথবা মেশিনের সাহায্যে ধান মাড়াই করি তখন শক্তি একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত হয়। তোমরা কী বলতে পারবে আমাদের প্রয়োজনীয় এতসব শক্তি আমরা কোথা থেকে পাই? আসলে আমরা যে শক্তি ব্যবহার করি তার বেশিরভাগ আসে জীবাশ্ম জ্বালানী (Fossil fuel) থেকে। এমনকি তুমি এই বইটি যে আলোতে এখন পড়ছ তার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তিও উৎপাদিত হয়েছে কোন একটি জেনারেটরে জীবাশ্ম জ্বালানী তথা গ্যাস, কয়লা বা পেট্রোলিয়াম পুড়িয়ে। তবে বর্তমান এবং আগামী দিনের মানুষের জন্য সংকট হলো পৃথিবীর জীবাশ্ম জ্বালানীর ভান্ডার শেষ হয়ে আসছে। অধিক পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার আবার পরিবেশবান্ধবও নয়। একারণে দীর্ঘদিন যাবত মানুষ পরিবেশ বান্ধব, একবার ব্যবহার করলে শেষ হয়ে যাবে না, বারবার ব্যবহার করা যাবে অথবা সুদীর্ঘকাল সীমাহীনভাবে ব্যবহার করা যাবে, এমন শক্তি উৎসের সন্ধান করছে। শক্তির এধরনের উৎসকে বলে নবায়নযোগ্য শক্তি। বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রের ঢেউ অথবা সূর্য থেকে আসা শক্তি নবায়নযোগ্য শক্তির উদাহরণ। ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশে শক্তির উৎস হিসেবে সৌরশক্তির ব্যবহার একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। যানবাহন, কলকারখানাসহ অধিকাংশ যন্ত্রপাতি চলে বিদ্যুতের সাহায্যে। একারণে সৌরশক্তিকে সরাসরি ব্যবহারের চেয়ে বিদ্যুৎশক্তিতে রুপান্তর করে কাজে লাগানো অনেক বেশি সুবিধাজনক। সৌরশক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তরের জন্য সৌরকোষ (Solar Cell) বা ফটোভোল্টায়িক (Photovoltaic) কোষ ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে সৌরশক্তি ব্যবহারের প্রচলন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তোমরা হয়ত কোনো কোনো বাড়িতে সোলার প্যানেল দেখে থাকবে। সোলার প্যানেলের যথাযথ ব্যবহারের জন্য এর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই
অধ্যায়ে সোলার প্যানেল এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন ব্যাটারী, চার্জ কন্ট্রোলার, ইনভার্টার ইত্যাদি স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
পৃথিবীতে যত শক্তি আছে তার সবই কোনো না কোনোভাবে আসে সূর্য থেকে। সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে উদ্ভাবন করা হয়েছে সৌরকোষ বা সোলার দেন। সোলার সেল দুই ধরনের অর্গানিক ও ইনঅর্গানিক। সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে গাছের সবুজ পাতায় যে প্রক্রিয়া খাদ্য উৎপাদিত হয়, সৌরকোষের কার্যক্রম অনেকটা ভার মতোই। সৌর কোষে থাকে সূর্যালোক থেকে শক্তি সংগ্রাহক (Light Harvesting) অণু বা উপাংশ। সোলার প্যানেল ফটোভোল্টায়িক এনার্জি কনভার্সন পদ্ধতিতে কাজ করে। এই পদ্ধতিতে সৌরশক্তি সরাসরি সোলার সেলের মাধ্যমে একমুখী বৈদ্যুতিক প্ৰবাৰ (Direct Electric Current, DC current) উৎপন্ন করে। সোলার সেল হিসেবে p-টাইপ এবং এ-টাইপ সিলিকন ক্রিস্টালের জাংশন ব্যবহার করা হয়। সিলিকন এক ধরনের অর্ধপরিবাহী (Semiconductor) পদার্থ যার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় আধানের বাহক হিসেবে কাজ করে ইলেকট্রন ও হোল (ইলেকট্রনের শূন্যতা)। p-টাইপ সিলিকন ক্রিস্টালে হোল (Hole) এবং n-টাইপ ক্রিস্টালে ইলেকট্রনের আধিক্য থাকে।
পি-এন (p-1) জাংশন এলাকায় অর্থাৎ p-টাইপ এবং n-টাইপ সিলিকন ক্রিস্টাল যেখানে মিলিত হয়, সেই জায়গায় ইলেকট্রন হোলের সাথে মিলিত হয়ে বাহুক শূন্য অবস্থার সৃষ্টি করে। একারণে পি-এন (p-1) জাংশন বরাবর রোধ অনেক বেশি হয়। পি-এন (p-1) আংশনের একপাশে নেগেটিভ চার্জ এবং অপরপাশে পজিটিভ চার্জের ঘনত্ব বেশি থাকায় জাংশন বরাবর একটি বিভব ঢালের (Potential gradient) সৃষ্টি হয়। পি-এন (p-1) জাংশনের উপর আলো পড়লে আলোক শক্তি ইলেকট্রন ও হোলকে (p-1) জাংশনের বিভব চালের বিপরীতে স্থানান্তর ঘটায়। এই প্রক্রিয়ায় কিছু কাজ সম্পন্ন হয় যা বিদ্যুৎ শক্তি হিসেবে সঞ্চিত হয়। সঞ্চিত বিদ্যুৎ শক্তির পরিমাণ আলোর তীব্রতা ও আলোকিত ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে। সৌরকোষ বা সোলার সেলের সাহায্যে দিনের বেলা সঞ্চয়ক কোষ বা সেকেন্ডারি সেল চার্জ করে রাখা হয় এবং রাতে ব্যবহার করা হয়। এক বর্গ সেন্টিমিটার সোলার সেল থেকে সর্বোচ্চ ২০-৪০ মিলি অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট পাওয়া যায়। প্রতিটি সোলার সেলে ০.৫ ভোল্ট থেকে ১০ ভোল্ট ডিসি ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। প্রকৃতপক্ষে এর পরিমাণ সোলার সেলে উপাদান ও সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করে। একাধিক সোলার সেল প্রয়োজনমতো সিরিজ বা প্যারালাল সংযোগ করে ভোল্টেজ ও কারেন্ট বাড়ানো যায়।
আমাদের দেশ সৌরশক্তি ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানে প্রায় সারা বছরই সূর্যের আলো পাওয়া যায়। এছাড়া সোলার সেলে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সহজে স্থাপন করা যায় এবং এগুলোর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ ও খরচ কম। সোলার সেল ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ হয় না এবং দুর্ঘটনা ঘটে না। এসব কারণে আমাদের মত জনবহুল দেশে সোলার সেল ব্যবহারের প্রচলন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আমাদের প্রাকৃতিক শক্তির উৎস খুবই সীমিত। সুতরাং সম্ভাব্য সবক্ষেত্রে সোলার প্যানেল ব্যবহার করলে জাতীয় সম্পদের উপর চাপ কমবে। সোলার ওভেন ব্যবহার করে সহজেই রান্নার কাজ করা যায়। অন্যান্য গৃহস্থালী কাজেও সোলার সেল থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ এর উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো দরকার।
সোলার প্যানেল সিস্টেমের প্রধান অংশগুলো নিম্নরুপ :
(ক) সোলার প্যানেল (Solar panel )
(খ) ব্যাটারি (Battery)
(গ) ইনভার্টার (Inverter)
(ঘ) চার্জ নিয়ন্ত্রক (Charge controller)
(ঙ) বৈদ্যুতিক লোড (Electric load)
(ক) সোলার প্যানেল (Solar panel )
সোলার প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সোলার সেল। মূলত সৌর শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরের মূল উপাদান সোলার সেল নামে পরিচিত। আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে সোলার সেল তৈরি করা হয়। সোলার সেল বা সোলার প্যানেলের বৈশিষ্ট্য হলো এর উপর সূর্যের আলো পড়লে সরাসরি বিদ্যুৎ শক্তি পাওয়া যায় । সোলার সেলে ডিসি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। বাজারে বিভিন্ন সাইজের সোলার প্যানেল পাওয়া যায়। একাধিক সৌর প্যানেলকে বৈদ্যুতিক ভাবে সংযোগ করে একটি কাঠামোর উপর স্থাপন করলে সামগ্রিক ব্যবস্থাকে সৌর প্যানেল বলে। একটি সৌর প্যানেল হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মান নির্ভর করে উক্ত প্যানেলের সোলার কোষের আয়তন ও সংখ্যার উপর। সাধারণত সৌর প্যানেলে ৩৬ টি সৌর কোষ সিরিজে যুক্ত থাকে। প্রতিটি সৌর কোষে ০.৫৬ ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। একটি সৌর প্যানেলের ৩৬ টি ০.৫৬ ভোল্ট যোগ করলে উৎপন্ন বৈদ্যুতিক ভোল্টেজের পরিমাণ হয় ১৯ থেকে ২১ ভোল্ট । অন্য দিকে কারেন্ট এর মান নির্ভর করে সৌর কোষগুলোর আয়তনের উপর। দুই ধরনের প্যানেল রয়েছে
(ক) সৌর-তাপ প্যানেল ও
(খ) ফটো ভোল্টাইক বা পিভি প্যানেল।
(খ) ব্যাটারি (Battery)
সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সৌর শক্তিকে সুবিধাজনক অন্য কোনো শক্তিরুপে সজ্জিত করে প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করা যায়। এ কাজে সচরাচর লেড এসিড ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। ব্যাটারীতে কতকগুলো ইলেকট্রো কেমিক্যাল সেল বা কোষ থাকে যার একটির সাথে অন্যটি সিরিজে বা প্যারালালে সংযুক্ত থাকে। ব্যাটারির সেল হলো ব্যাটারির মূল উপাদান। ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রুপান্তরিত করে সস্তি রাখা হয়। বিশেষ ব্যবস্থার রাসায়নিক শক্তিকে আবার বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা হয়। সফর বাড়ানোর জন্য ব্যাটারি ব্যাংক ব্যবহার করা হয়। ব্যাটারি ব্যাংক হলো অনেকগুলো ব্যাটারির সমষ্টি। এই ব্যাটারিগুলো সিরিজ প্যারালালে সংযোগ করা যায়। ভোল্টেজ বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে সিরিজে সংযোগ দিতে হয় এবং কারেন্ট বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে প্যারালালে সংযোগ দিতে হয়।
(গ) ইনভার্টার (Inverter)
সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সাধারণত ভিসি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এই বিদ্যুৎ শক্তি দিয়ে চার্জ কন্ট্রোলারের মাধ্যমে ব্যাটারি ব্যাংকে রাসায়নিক শক্তি সঞ্চয় করা হয়। আমরা বসত-বাড়িতে সাধারণত এসি লোড ব্যবহার করি। একারণে ডিসি কারেন্টকে এসিতে কনভার্ট করতে হয়। ইনভার্টারের সাহায্যে ডিসি কারেন্টকে এসি কারেন্টে রূপান্তরিত (Convert) করা হয়। ৩.৪ ও ৩.৫ নং চিত্রে ইনভার্টার দেখানো হয়েছে।
(ঘ) চার্জ নিয়ন্ত্রক (Charge controller)
চার্জ নিয়ন্ত্রক ব্যাটারিতে জমাকৃত বিদ্যুৎ এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যাটারির জীবনকাল সংরক্ষণ করে। এটি শক্তি রূপান্তরের প্রধান ইউনিট হিসেবে কাজ করে। চার্জ কন্ট্রোলার একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা ব্যাটারীকে অতিরিক্ত চার্জ এবং ডিসচার্জ হওয়া থেকে রক্ষা করে। চার্জ নিয়ন্ত্রক সার্কিটকে ব্যাটারী এবং প্যানেলের সঙ্গে প্যারালালে সংযোগ করা হয়। এছাড়াও চার্জ কন্ট্রোলার শর্ট সার্কিট হওয়া থেকে সিস্টেমকে রক্ষা করে। সোলার হোম সিস্টেমকে মনিটরিং করার জন্যও চার্জ কন্ট্রোলার এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
(ঙ) বৈদ্যুতিক লোড (Electric Load )
বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সামগ্রী যেমন টিভি, বাতি, ফ্যান, কম্পিউটার, মোবাইল, ক্যালকুলেটর, সেচযন্ত্র ইত্যাদি চালনার জন্য উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক কোনো ডিভাইসকে ব্যাটারির বা পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সাথে যুক্ত করলে যন্ত্রটির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। এগুলোকে লোডবলে। অর্থাৎ যা ব্যাটারি বা অন্য কোনো উৎস থেকে বিদ্যুৎ শক্তি খরচ করে তাকে লোড বলে। লোড সাধারণত দুই প্রকার: এসি লোড ও ডিসি লোড। আবার লোডের ধরনের উপর ভিত্তি করে বৈদ্যুতিক লোডকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
১। রেজিস্টিভ লোড (Resistive load): যেমন বাতির ফিলামেন্ট একটি ডিসি লোড কারণ ইহা বিশুদ্ধ রেজিস্টিভ লোড (ইহাতে কোন ইন্ডাকটিভ রিয়াকট্যান্স বা ক্যাপাসিটিভ রিয়াকট্যান্স নাই)। এছাড়াও স্থির রেজিস্ট্যান্স, পরিবর্তনশীল রেজিস্ট্যান্স, সোল্ডারিং আয়রন, থার্মাল ওভার লোড রিলে ইত্যাদি রেজিস্টিভ লোড।
২। ইন্ডাকটিভ লোড (Inductive load): সার্কিটে বিশুদ্ধ ইন্ডাক্টর সংযুক্ত থাকলে ইন্ডাকটিভ রিয়াকট্যান্সের কারণে এসি বা পরিবর্তনশীল বিদ্যুৎ প্রবাহে বাঁধার বা রোধের সম্মুখীন হয়, কিন্তু ডিসি বা স্থির মানের কারেন্টের জন্য এই রোধের পরিমাণ শূন্য। এসব ক্ষেত্রে লোডের মান ব্যবহৃত এসি কারেন্ট এর কম্পাংকের সমানুপাতিক (X1=2rfL)। এসি লোড সৃষ্টি করে এমন কয়েকটি বস্তু হলো চোক কয়েল, ফ্যান, মোটর, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার ইত্যাদি।
৩। ক্যাপাসিটিভ লোড (Capacitive Lond) : ক্যাপাসিটর বা কনডেলার, ক্যাপাসিটর ব্যাংক, সিনক্রোনাস মোটর ও ফেইজ অ্যাডভানসার ইত্যাদি।
প্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতিগুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো-তাপবিদ্যুৎ, পানিবিদ্যুৎ, ডিজেল ইঞ্জিন দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইত্যাদি। সোলার প্যানেল সিস্টেমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এর যেসব সুবিধা পাওয়া যায় তাহলো:
১. সহজে স্থাপন, সম্প্রসারণ, এবং হস্তান্তর যোগ্য।
২. বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় খুব কম। তবে এখনো প্রতি একক ইউনিট বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে মূল্য (খরচ) প্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থেকে অনেক বেশি। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য (খরচ) যথাক্রমে ৩২.০০ ও ৫.৭২ টাকা।
৩. চলতি খরচ বা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ খুবই কম।
৪. নির্ভরশীলতা বেশি ও পরিচালনা সহজ।
৫. বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই বলে ইহা অধিক নিরাপদ।
৬. শব্দহীন, গন্ধহীন এবং পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখে ।
৭. জ্বালানি খরচ নেই, সহজে নষ্ট হয় না এবং প্যানেল স্থাপন ব্যয় কম।
৮. কৃত্রিম উপগ্রহে সৌর শক্তি ব্যবহারের অনেক সুবিধা পাওয়া যায় ।
৯. লোডের নিকটে স্থাপন করা যায় বলে পরিবহন ব্যয় নেই বললেই চলে।
১০. বায়ুমণ্ডল স্বাভাবিক থাকলে এনার্জির উৎস চিরস্থায়ী।
সোলার এনার্জি ব্যবহারের অনেক সুবিধা থাকলেও বাস্তবে এ শক্তির রূপান্তর বা সঞ্চয় ব্যাপক ভাবে সম্ভব হচ্ছে না। এ শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহারে কিছু অসুবিধা বিদ্যমান। প্রাথমিক খরচ খুব বেশি এবং আবহাওয়া জনিত কারণে এবং রাতে সূর্যের আলোর অনুপস্থিতে এনার্জি উৎপাদন সম্ভব হয় না। সরকার সৌর শক্তি ব্যবহারের উপর ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে এবং দিনদিন/ক্রমান্বয়ে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে সরকার আধুনিক অবকাঠামো স্থাপনায় সৌর সিস্টেম স্থাপনে গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে সোলার বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদনের পরিমাণ ১৭৪ মেগাওয়াট যা দেশের মোট উৎপাদনের মাত্র ১.১ শতাংশ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সোলার বিদ্যুৎ খাত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত হচ্ছে ২০২৪-২৫ সালে ১০০০ মেগাওয়াট (এক গিগাওয়াট) উৎপন্ন ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর লক্ষ্যমাত্রায় কাজ করা উচিত। বর্তমানে ব্যবহৃত সোলার প্যানেলের দক্ষতা খুবই কম; মাত্র ২২-২৪%। বাজারে বেশি দক্ষতার সোলার সেল পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে উন্নত মানের বেশি দক্ষতার সোলার সেল সহজলভ্য হবে এবং এ পদ্ধতিতে এনার্জি উৎপাদনের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
একটি সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপনের সময় নিম্নলিখিত বিষয় সমূহের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে।
(ক) আলোর পর্যাপ্ততা :
দিনের অধিকাংশ সময় বা সারাদিন যে স্থানে সূর্যের আলো থাকে সে স্থানে প্যানেল স্থাপন করতে হবে। অর্থ্যাৎ যেখানে উন্মুক্তভাবে সূর্যের আলো পড়ে সেখানে প্যানেল স্থাপন করতে হয়।
(খ) ভূমির সাথে হেলানো ভাবে স্থাপন:
সৌর প্যানেলকে দক্ষিণ মূখী করে ভূমির সাথে ২৩° ডিগ্রী কোণে হেলানো ভাবে স্থাপন করতে হবে। উল্লেখ্য যে, এ কৌণিক পরিমাপ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে (বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন সূর্যের আলো খাড়া ভাবে পড়ে এবং শীত কালে তীর্যক ভাবে পড়ে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে প্যানেলকে বিভিন্ন কোণে স্থাপন করা কষ্টকর ও ঝামেলাপূর্ণ কাজ । এজন্য বিশেষজ্ঞগণ জানুযারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কৌণিক বিশ্লেষণ করে একটি গড় কৌণিক অবস্থান নির্ধারণ করেছেন। এ অবস্থায় প্যানেল স্থাপন করলে গড়ে বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এ কৌণিক পরিমাপ হচ্ছে ভূমির সাথে ২৩°।
(গ) প্যানেলের উপর ছারা এবং আলোর প্রতিবন্ধকতা:
কোন অবস্থাতেই যাতে প্যানেলের উপর ছায়া না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ছায়া পড়লে বা আলোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে প্যানেল পূর্ণ দক্ষতার কাজ করতে পারে না। অর্থ্যাৎ প্যানেলের বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায়।
(ঘ) প্যানেল ও ব্যাটারি দূরত্ব :
ব্যাটারি ও প্যানেলের মধ্যে দূরত্ব যথাসম্ভব কম রাখা উচিত। কোন অবস্থাতেই ৩০ ফুটের বেশী হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। ২০-২৫ ফুটের মধ্যে থাকাই ভালো। কারণ এই বিদ্যুৎ ঘর ক্ষমতা সম্পন্ন এবং বিদ্যুতের পরিমাণও খুব অল্প। তাই ব্যাটারি ও প্যানেলের দূরত্ব যত বেশী হবে পরিবাহী রেজিস্ট্যান্স ও ভোল্টেজ ড্রপ তত বেশি হবে । অর্থাৎ বিদ্যুতের অপচয় ঘটবে ফলে সিস্টেমের কর্ম সক্ষতা কমে যাবে ।
গ্রীষ্ম কালে সূর্য উলম্ব ভাবে থাকে এ কারণে হেলানো কোনের পরিমাণ কম হলে ভাল। এজন্য সোলার প্যানেলকে প্রায় মাটির সমান্তারালে রাখতে হয়। বসন্তকালে ভূমির অক্ষাংশের সমান ২৩০ ডিগ্রী কোণে কাত করে বসাতে হবে। এরপর সংযোগ তার দুটি মাটির ভিতর দিয়ে নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের সাথে সংযোগ করতে হবে। সংযোগ বাক্সে ব্যাটারি এবং চার্জ কন্ট্রোলার যথা নিয়মে যুক্ত করতে হবে।
১. ব্যবহারকারীর চাহিদা মোতাবেক ব্যাটারি সংগ্রহ করতে হবে ।
২. উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে ব্যাটারি নির্মাতা কর্তৃক নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাটারি স্থাপন করতে হবে।
৩. ব্যাটারির চার্জ ও ডিসচার্জ রেটিং অনুযায়ী উপযুক্ত মানের চার্জ কন্টোলার সংগ্রহ করতে হবে।
৪. প্রথমে যেখানে সিষ্টেম লাগাতে হবে সেই জায়গার একটি ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম করতে হবে ।
৫. চার্জ কন্ট্রোলারের সহিত ব্যাটারি, সোলার প্যানেল ও লোড ড্রয়িং অনুযায়ী বৈদ্যুতিক সংযোগ করতে হবে।
৬. চার্জ কন্ট্রোলারটি উপযুক্ত স্থানে ক দিয়ে সঠিকভাবে স্থাপন করতে হবে ।
৭. প্যানেল স্থাপনের জন্য খোলাজায়গা অর্থ্যাৎ বাড়ির যে স্থানে সূর্যোদয় থেকে সূর্যান্ত পর্যন্ত আলো থাকে সে স্থানে প্যানেল স্থাপন করতে হবে।
৮. ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম অনুযায়ী প্রথম কন্ট্রোলার লাগাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কন্ট্রোলার থেকে প্যানেলের দূরত্ব যেন ২৫ ফুটের বেশি না হয় ।
৯. প্রথমে চার্জ কন্ট্রোলারের সাথে ব্যাটারি সংযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে নেগেটিভ (-) সংযোগ অতঃপর পজিটিভ (+) সংযোগ দিতে হবে। প্যানেলের সংযোগ দেওয়া মাত্র (দিনের বেলা) চার্জ কন্টোলারের চার্জিং লাইটটির এলইডি জ্বলে উঠবে।
১০. সর্বশেষে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের (লাইট, টিভি) সংযোগগুলিকে পর্যায়ক্রমে চার্জ কন্ট্রোলারের সাথে সংযোগ দিতে হবে।
(১) সকল সুইচ ও ফিউজ পর্যবেক্ষণ
সুইচ ও ফিউজ পরীক্ষা করে ঢিলা সংযোগ থাকলে পুনঃ সঠিক সংযোগ করা বা পরিবর্তন করা, তার ভাঙ্গা বা সংযোগ খোলা থাকলে পূনঃ সংযোগ করা ইত্যাদি।
(২) লোড পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষণ
(ক) ক্ষমতার অতিরিক্ত কোন লোড সংযোগ দেওয়া যাবে না ।
(খ) কোন অবস্থাতেই লোডের অবস্থান ২৫ ফুটের অধিক দূরত্বে হবে না।
(গ) ব্যাটারিপ্রাপ্ত ও লোডে প্রান্তে ভোল্টেজ পার্থক্য ০.২৫ ভোল্ট এর অধিক হবে না।
(৩) ব্যাটারি পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ
(ক) পরিচ্ছন্নতা, বায়ুচলাচল, সেল এবং কানেক্টরগুলোতে বাহ্যিক করোশন ইত্যাদি। (খ) চার্জ কারেন্ট (প্যানেলের নির্দেশিকা অনুসারে) এবং চার্জ ভোল্টেজ ১৩.৫ ভোল্ট থেকে ১৫.৫ ভোল্ট থাকতে হবে।
(গ) ব্যাটারি যথেষ্ট পরিমাণ কারেন্ট সরবরাহ করতে সক্ষম হতে হবে।
(৪) চার্জ কন্ট্রোলার পর্যবেক্ষণ
(ক) চার্জ কন্ট্রোলার এর ইনপুট-এ ইন্ডিকেটর এলইডি জ্বলে কি না ;
(খ) চার্জ কন্ট্রোলার এর ইনপুট-এ প্রাপ্ত ভোল্টেজ 13.5 V- 15.5 Vআছে কি না ;
(গ) ব্যাটারী স্ট্যাটাস ইন্ডিকেটর এলইডি জ্বলে কিনা?
(ঘ) চার্জ কন্ট্রোলার এর আউটপুট-এ লোড ভোল্টেজ 13.5 V-15.5 V আছে কি না ;
এসি ও ডিসি তড়িৎ শক্তির মধ্যে ডিসি তড়িৎ শক্তির নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। এ শক্তি একসাথে বেশি পরিমাণে উৎপন্ন করা যায় না কিন্তু এ শক্তির প্রয়োজনীয়তা অনেক ক্ষেত্রেই অপরিহার্য। ভিসি তড়িৎ (বিদ্যুৎ) উৎপন্নের ক্ষেত্রে প্রধান উৎস সেল বা বিদ্যুৎ কোষ। যে যন্ত্রের সাহায্যে রাসায়নিক শক্তি থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহ পাওয়া যায় তাকে বৈদ্যুতিক সেল বা বিদ্যুৎ কোষ বলে। বিদ্যুৎ কোষ বা সেল মূলত ইলেকট্রো-কেমিক্যাল বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট। বিদ্যুৎ কোষ প্রধানত দু'ধরনের হয়। প্রাইমারি বা মৌলিক সেল (Primary Cell) এবং সেকেন্ডারি বা সক্ষরক সেল (Secondary Cell)। সেলে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ ও ইলেকট্রোড এর উপর ভিত্তি করে সেলের বিভিন্ন নামকরণ করা হয়ে থাকে। এর বহুবিধ সুবিধার জন্য দিন দিন এর ব্যবহার বেড়েই চলছে।
সেলের উপাদান দুইটি। যথা-
(ক) পজিটিভ ও নেগেটিভ ইলেকট্রোজ
(খ) রাসায়নিক পদার্থ বা ইলেকট্রোলাইট।
কতকগুলো তড়িৎ কোষ বা সেল এর সংযোগকে ব্যাটারি বলে। ব্যাটারিতে একাধিক সেল যুক্ত থাকে। সাধারণভাবে প্রতিটি ড্রাই সেলে ১.৫ ভোল্ট, লেড এসিড সেলে ২.২ ভোল্ট উৎপন্ন হয় এবং উৎপাদিত শক্তির পরিমাণ সীমিত। চিত্রে ব্যাটারির প্রতীক ও গঠন দেখানো হলো।
ভোল্টেজ বা কারেন্টের পরিমাণ বা উভয়ই বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেলের সংযোগ করে ব্যাটারি তৈরি করা হয়। ভোল্টেজ বৃদ্ধি করতে সেলের সিরিজ সংযোগ, কারেন্ট বৃদ্ধিতে প্যারালাল সংযোগ এবং ভোল্টেজ ও কারেন্ট বৃদ্ধিতে মিশ্র সংযোগ করা হয়। সংযুক্ত সেলের পরিমাণ লোডের চাহিদার উপর নির্ভর করে।
১। প্রাইমারি বা মৌলিক সেল (Primary Cell)
যে সেল বা বিদ্যুৎ কোষ এর শক্তি একবার শেষ হলে চার্জ করে পুনরায় ব্যবহার করা যায় না, তাকে প্রাইমারি সেল বা মুখ্য কোষ বলে। লেকল্যান্স সেল, ড্যানিয়েল সেল এবং ড্রাই সেল ইত্যাদি প্রাইমারি সেলের শ্রেণিভুক্ত। বর্তমানে এ ধরনের সেলের ব্যবহার সীমিত। এ ধরনের সেল ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, টর্চলাইট ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের সেল হতে একই রকম ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায় না। ব্যবহারের ফলে ক্ষমতা শেষ হওয়ার আগেই ভোল্টেজ কিছুটা কমে যায়।
২। সেকেন্ডারি সেল বা সঞ্চয়ক সেল (Secondary Cell)
যে সেল বা বিদ্যুৎ কোষ এর শক্তি একবার শেষ হলে তা পুনরায় চার্জ করে ব্যবহার করা যায়, তাকে সেকেন্ডারি সেল বলে বা সঞ্চয়ী বিদ্যুৎ কোষ বলা হয়। চার্জের দ্বারা বিদ্যুৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে এবং ব্যবহারের সময় রাসায়নিক শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ব্যবহারের পর চার্জ শেষ হলে আবার চার্জ করে উক্ত সেল পুনরায় ব্যবহার করা যায়।
যে সেল বা বিদ্যুৎ কোষে ইলেকট্রোলাইট হিসেবে ড্রাই বা পেস্ট বা জেলির ন্যায় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় তাকে ড্রাই সেল বলে। ড্রাই সেল বাস্তবে ড্রাই নয়, কারণ ইলেকট্রোলাইট ড্রাই হলে ড্রাই সেল বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করতে পারে না। বাহ্যিক সাইজ অনুসারে ড্রাই সেল তিন ধরনের হয়।
(ক) ডি-টাইপ, (খ) মিডিয়াম টাইপ এবং (গ) পেন্সিল টাইপ।
যে অংশগুলো সমন্বয়ে ড্রাই সেল গঠিত সেগুলো নিম্নরূপ ঃ
(ক) কার্বন দণ্ড (খ) ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড (গ) দস্তার পাত্র (ঘ) তামার ক্যাপ (ঙ) অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (চ) চোষক কাগজ (ছ) শক্ত কাগজ ও গালা বা পিচ, বালি ইত্যাদি।
ড্রাই সেলে নেগেটিভ ইলেকট্রোড হিসেবে দত্তার পাত্র ব্যবহার করা হয় এবং পজিটিভ ইলেকট্রোড হিসেবে সঠিক মাপের কার্বন দণ্ড ব্যবহার করা হয় যা দস্তার পাত্রের মধ্যে বসানো থাকে। এ দন্ডের উপরে পিতল বা তামার ক্যাপ লাগানো থাকে। দস্তার পাত্রে ইলেকট্রোলাইট হিসেবে পেস্ট বা জেল এর ন্যায় অ্যামেনিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয়। কার্বন দণ্ডের চারপাশে ডিপোলারাইজার হিসেবে ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়, যা সেলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার উৎপাদিত পানিকে চুষে নেয়। তা না হলে দত্তার পাত্র জিংক ক্লোরাইডে পরিণত হয়ে ইলেকট্রোলাইট লিক করতে পারে। কখনও কখনও ড্রাই সেল লিকপ্রুফ করার জন্য দস্তার পাত্রের চারদিকে ইস্পাতের পাতলা পাত দিয়ে মোড়ানো থাকে। ইলেকট্রোলাইট যেন শুকিয়ে না যায় তার জন্য সেলের উপরি ভাগ গালা দিয়ে বন্ধ করা হয়। পিতলের বা তামার ক্যাপ ও গালার মাঝে খুব সামান্য ফাঁক থাকে যাতে গ্যাস সৃষ্টি হলে বের হতে পারে। এ স্থানে অনেক সময় বালি দেওয়া হয়। এর উপর মোটা চোষক কাগজ দিয়ে মোড়ানো হয় এবং তার উপর প্রতিষ্ঠানের লেবেল লাগানো থাকে। প্রতিটি ড্রাই সেলের ইএমএফ ১.৫ ভোল্ট হয়। এ ধরনের সেলের বিদ্যুৎ ক্ষমতা খুব কম হয়ে থাকে।
চিত্রে একটি ড্রাই সেলের অভ্যন্তরীণগঠন দেখানো হলো।
যে সকল কাজে ড্রাই সেল ব্যবহার করা হয় তা হলো-
১। ইলেকট্রনিক ঘড়িতে
২। ক্যালকুলেটরে
৩। টর্চ লাইটে
৪। ক্যামেরায়
৫। রিমোটে
৬। রেডিও এবং টেপ রেকর্ডারে
৭। বিভিন্ন পরিমাপক যন্ত্রে ।
৮। বিভিন্ন খেলনায়
সেকেন্ডারি বা সঞ্চয়ী সেল (Secondary Cell) : যে সকল সেল একবার কাজে ব্যবহার করার পর এর সঞ্চিত শক্তি শেষ হয়ে গেলে আবার চার্জ করে কাজের উপযোগী করা যায়, সেই সকল সেলকে সেকেন্ডারি সেল বলে। এ জাতীয় সেলকে সঞ্চয়ী সেলও বলা হয়। সেকেন্ডারি সেলে বৈদ্যুতিক শক্তি রাসায়নিক শক্তিরূপে জমা থাকে, তাই একে স্টোরেজ সেল বলা হয়।
নিচের চিত্রে লেড-এসিড সেলের গঠন ও কার্যপ্রণালী চিত্রসহ বর্ণনা করা হলো।
*সেলের প্রধানত তিনটি অংশ থাকে। যথা- ১. বহি আবরণ বা সেলের কেস বা পাত্র।
২. ইলেকট্রোড :
(ক) পজিটিভ ইলেকট্রোড বা ধণাত্মক পাত বা অ্যানোড (Positive Electrode): বাদামি রঙের লেড পার-অক্সাইড পাত।
(খ) নেগেটিভ ইলেকট্রোড বা ঋনাত্মক পাত বা ক্যাথোড (Negative Electrode ) : সচ্ছিদ্র ধূসর স্পঞ্জ লেড ।
৩. ইলেকট্রোলাইট (Electrolite) : পাতলা সালফিউরিক এসিড।
১। বহি আবরণ:
এ সেলের বহি আবরণ ব্যাকলাইট, কঠিন রাবার অথবা কাঁচের তৈরি হয়ে থাকে। ইহা ব্যাটারির সব উপাদান ধারণ করে বলে একে ধারক বলে। ধারকে সেলের জন্য গ্রুপিং করা থাকে। ব্যাটারির ভোল্টেজ ক্যাপাসিটি সেল সংখ্যার উপর নির্ভর করে। প্রতিটি সেলের ভোল্টেজ ক্যাপাসিটি ২ ভোল্ট হয়। অর্থাৎ ১২ ভোল্ট ব্যাটারির জন্য ৬ টি সেল থাকে।
২। ইলেকট্রোড বা প্লেট (Electrode or Plates) :
পজিটিভ ও নেগেটিভ ইলেকট্রোড এন্টিমনি-লেড অ্যালয়ের শক্ত কাঠামো দ্বারা গঠিত, যাতে অ্যাকটিভ বা ক্রিয়াশীল পদার্থ চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে লাগানো হয়। অ্যাকটিভ বা ক্রিয়াশীল পদার্থের প্রধান উপাদান হলো লেড-অক্সাইড। এ প্রক্রিয়ায় পজিটিভ প্লেট লেড পার-অক্সাইডে রূপান্তরিত হয় এবং গাঢ় বাদামি রং ধারণ করে। নেগেটিভ প্লেটটি ছিদ্রযুক্ত ধূসর বর্ণের লেডে রূপান্তরিত হয়। প্রতিটি সেলে পজিটিভ প্লেটের চেয়ে নেগেটিভ প্লেট একটি বেশি থাকে এবং বহির্ভাগের দুইটি প্লেটই নেগেটিভ প্লেট।
নেগেটিভ প্লেটের মাঝে একটি পজিটিভ প্লেট থাকে। সেলে প্লেটের সংখ্যা যত বেশি হবে ব্যাটারির ক্ষমতা তত বেশি হবে।
৩। ইলেক্ট্রোলিটিক(Electrolytic):
শিল্প-এসিড গেলে ব্যবহৃত ইলেকট্রোলাইট হলো পাতলা সালফিউরিক এসিড প্রবণ। এটির আপেক্ষিক অয়ত্ব ১১২ থেকে ১.২৪ পর্যন্ত হয়।
৪। ডি-এসিত লেগে ন্যান্য অংশ
১.উপাদান :
এ সেলের ধারণ ক্ষমতা গ্রেটের ক্ষেত্রফলের উপর বা আয়তনের উপর নির্ভর করে। প্লেটের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধির জন্য প্লেটগুলো আকার আকৃতিতে বৃহৎ করার পরিবর্তে এক এল পরিটিভ এবং এক এল নেগেটিভ প্লেট ব্যবহার করা হয় এবং সেগুলো অভ্যন্তরীণ ভাবে সংযোগ করে গ্রুপ ভিত্তিক একত্র করা থাকে। এরপর এ দুইটি চালকে একটা কোষে আবদ্ধ করা হয়, যাকে উপাদান বলে।
১। নেগেটিভ প্লেট ২। সেপারেটর ৩। পজিটিভ প্লেট ৪। পজিটিভ প্লেটগ্রুপ ৫। নেগেটিভ প্লেটগ্রুপ ৬। গ্রুপ সার্পোট ৭। লগ ৮। প্লেট গ্রুপ ৯। গার্ড স্ক্রিন ১০। গার্ড প্লেট ১১। সেল কভার ১২। প্লাগ ওয়াশার ১৩। ভেণ্টপ্লাগ ১৪। অভ্যন্তরীণ সেল কানেকটর ১৫। টার্মিনাল ১৬। স্কু।
২. সেপারেটর (Separator)
পজিটিভ ও নেগেটিভ প্লেটের মধ্যে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে যেন না ঘটে সে লক্ষ্যে অপরিবাহি পদার্থের তৈরি পাত উভয় প্লেটের মাঝখানে ব্যবহৃত হয় যাকে সেপারেটর বলে। এ সেপারেটরগুলো বিশেষভাবে সরু খাঁজ কাটা ছিদ্রযুক্ত কাঠের, রবারের বা কাঁচের তৈরি হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক কাঠকে গরম ক্ষারীয় দ্রবণে ডুবানো হয়, যাতে কাঠের ভিতরকার এসিটিক এসিড এবং অন্যান্য উপাদান দূরীভূত হয়। সেপারেটরগুলোকে সব সময় আর্দ্র রাখা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে পাতলা ছিদ্র কঠিন রাবারের শিট কাঠের সেপারেটরের সাথে ব্যবহৃত হয়। কখনও কখনও কাঁচ ও কাঠ সেপারেটর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চিত্র ৩.১৮ এ সেপারেটর দেখানো হয়েছে।
৩. ভেণ্ট
প্রতিটি সেলের বহিঃআবরণের একটি করে ছিদ্র বা ভেণ্ট থাকে। যার ভেতর দিয়ে ইলেট্রোলাইট বা দ্রবণের নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় এবং প্রয়োজনের সময় দ্রবণে পানি দেওয়া হয়। সেল যখন কাজ করে, তখন ভেন্ট প্লাগ দ্বারা বন্ধ করা থাকে, যাতে দ্রবণ বাইরে আসতে না পারে। ভেন্ট প্লাগের উপরিভাগে একটি সরু ছিদ্র থাকে যেন চার্জিং এর সময় গ্যাস নির্গত হতে পারে। চার্জের সময় এটি অবশ্যই খুলে রাখতে হবে।
৪. ইন্টারনাল কানেকটর
সেলের পজিটিভ প্লেটসমূহ একত্রে এবং নেগেটিভ প্লেটসমূহ একত্রে সীসার পাত দিয়ে সংযুক্ত থাকে। এটিই ইন্টারনাল কানেকটর যা ঝালাই করে তৈরি করা হয়।
৫. এক্সটার্নাল কানেকটর
কতগুলো সেল দিয়ে ব্যাটারি তৈরির ক্ষেত্রে সেল গুলোর মধ্যে বাহিরের দিকে নিয়ম অনুযায়ী সংযোগের জন্য সীসার যে পাত দিয়ে সংযুক্ত হয় সেটিই এক্সটার্নাল কানেকটর।
নিচে লেড-এসিড সেলের (ব্যাটারির) ব্যবহারের তালিকা দেওয়া হলো:
১. মোটরগাড়ি (বাস, ট্রাক, লরী, কার, মাইক্রোবাস) চালু করার কাজে।
২. রেডিও, টেলিফোন একচেঞ্জ ইত্যাদি ক্ষেত্রে।
৩. আইপিএস এর সাথে।
৪. ইদানিংকালে মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার চালাতে।
৫. রেলওয়ের সিগনাল সিস্টেমে।
৬. বৈদ্যুতিক পাওয়ার উৎপাদনের ক্ষেত্রে এবং এর কন্ট্রোল সিস্টেমে।
৭. সোলার সিস্টমে।
সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতার সাথে লেড-এসিড সেল (ব্যাটারি) চার্জ করলে ব্যাটারির সেল সমূহ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ব্যাটারি চার্জিং পদ্ধতির চিত্র ৩.১৯ এ দেখানো হয়েছে। চার্জের সময়ে সতর্ক পদক্ষেপ সমূহ নিম্নরূপ-
১. সঠিক পোলারিটিতে সংযোগ করতে হবে অর্থাৎ ব্যাটারির পজিটিভ সাপ্লাইয়ের সাথে পজিটিভ এবং ব্যাটারির নেগেটিভ সাপ্লাইয়ের সাথে নেগেটিভ সংযোগ করতে হবে ।
২. ডিসি সাপ্লাই দিয়ে চার্জ করতে হবে। চার্জিং ভোল্টেজ ব্যাটারির ভোল্টেজের চেয়ে বেশি হতে হবে। ৩. অল্প কারেন্ট প্রবাহে বেশি সময় ধরে চার্জ করতে হবে। এক্ষেত্রে তৈরিকারকের নির্দেশ মত ব্যাটারি চার্জ করা উচিত।
৪. চার্জের সময় ভেন্ট প্লাগ খুলে রাখতে হবে, যাতে বুদবুদ বা গ্যাস বের হতে পারে।
৫. সেলের এসিড লেভেল কমলে বিশুদ্ধ বা পাতিত (Distilled) পানি দিয়ে লেভেল সঠিক করে চার্জ করতে হবে। এক্ষেত্রে এসিড লেভেল প্লেটের ১৫ মি.মি. উপরে থাকা প্রয়োজন।
৬. চার্জের সময় হাইড্রোমিটার দিয়ে সেলের এসিডের আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপতে হবে। ব্যাটারির পূর্ণ চার্জিং এ প্রতিটি সেলের আপেক্ষিক গুরুত্ব হবে ১.৩১ । ৭. ব্যাটারি চার্জের সময় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাস বের হয় বলে কাছে আগুন নেওয়া যাবে না।
৮. শরীর বা জামা কাপড়ে যেন এসিড না লাগে এবং দুর্ঘটনায় নিরাপত্তার জন্য কাছেই পর্যাপ্ত পানি রাখা প্রয়োজন।
হাইড্রোমিটারের দ্বারা ব্যাটারির ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব (Specific Gravity) পরিমাপ করা হয়। কোনো একটি পদার্থের আপেক্ষিক গুরুত্ব বলতে 4° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট আয়তনের পানির ভরের সাথে সম আয়তন বিশিষ্ট কোন একটি পদার্থ কতগুণ ভারি বা হাল্কা বুঝায়। লেড-এসিড সেল (ব্যাটারি) চার্জের সময় ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব পরিমাপ করা প্রয়োজন । একটি পূর্ণ চার্জ ব্যাটারির ইলেকট্রোলাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.২-১.৩ হয়ে থাকে। হাইড্রোমিটারের ভিতরে একটি কাঁচের নল আছে যেখানে তিনটি অংশ লাল, সাদা এবং সবুজ রং দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। টেস্টটিউব এর সাহায্যে ব্যাটারি হতে ইলেকট্রোলাইট তুলে আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপা হয়।
সঞ্চয়ী ব্যাটারি নির্দিষ্ট কার্যকালের পর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে, ব্যাটারি দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্ষম থাকে। ব্যাটারি দীর্ঘ মেয়াদী ত্রুটিযুক্ত ভাবে কাজ করার জন্য নিয়মিতভাবে পরিচর্যা করাকে ব্যাটারির রক্ষণাবেক্ষণ বলে। একে ব্যাটারি সার্ভেসিংও বলে। লেড-এসিড ব্যাটারির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাটারির কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে এবং ব্যাটারিকে
দীর্ঘস্থায়ী করে। এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হলো- ১. ব্যাটারি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর্দ্র ও স্যাতস্যাতে জায়গায় ব্যাটারি রাখা যাবে না।
২. সঠিক পোলারিটি, সঠিক ভোল্টেজ ও কম কারেন্ট এ চার্জ করতে হবে। মোচার্জিং ব্যাটারিকে দীর্ঘস্থায়ী
করে। ৩. চার্জের সময় হাইড্রোমিটার দিয়ে প্রতিটি সেলের এসিডের আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপতে হবে।
৪. ডিসচার্জ অবস্থায় ব্যাটারি ফেলে রাখা যাবে না এবং কম চার্জে ব্যাটারি ব্যবহার করা যাবে না অর্থাৎ প্রতিটি সেলের ভোল্টেজ ১.৮ ভোল্টের নিচে হলে। এ অবস্থায় ব্যাটারি চার্জ করতে হবে।
৫. ব্যাটারি ব্যবহারকালে সঠিকভাবে টার্মিনালে সংযোগ দিতে হবে।
৬. ব্যাটারির সেলসমূহে এসিড লেভেল কমলে বিশুদ্ধ বা পাতিত (Distilled) পানি এমনভাবে দিতে হবে যেন প্লেটসমূহ ১৫ মি.মি. এসিডে ডুবে থাকে।
৭. ডিসচার্জ রেট বা লোড অ্যাম্পিয়ার বেশি হওয়া চলবে না।
৮. ব্যাটারি প্রতিনিয়ত ওভারচার্জ করা যাবে না। ৯. ব্যাটারি ডিসচার্জ হওয়ার আগেই সঠিকভাবে চার্জ করলে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা বাড়ে।
১০. ব্যাটারির উপর কোন ধাতব পদার্থ পড়লে ব্যাটারি শর্ট হতে পারে। সেজন্য সাবধান থাকতে হবে।
১১. ব্যাটারি রোদে রাখা যাবে না।
ব্যাটারির রেটিং বলতে উহার ভোল্টেজ, অ্যাম্পিয়ার-আওয়ার ক্যাপাসিটি, ডিসচার্জ হার বা রেট ইত্যাদিকে বোঝায়। একটি ব্যাটারির রেটিং এ উহার ভোল্টেজ ক্যাপাসিটি, অ্যাম্পিয়ার আওয়ার ক্যাপাসিটি অর্থাৎ কত ঘণ্টায় কী পরিমাণ অ্যাম্পিয়ার সরবরাহ দিতে সক্ষম। একটি ব্যাটারির রেটিং ১২ ভোল্ট, ৮০ অ্যাম্পিয়ার আওয়ার বলতে বোঝায়, উহা ১২ ভোল্টের লোডে ৮ অ্যাম্পিয়ার হারে ১০ ঘণ্টা বা ১০ অ্যাম্পিয়ার হারে ৮ ঘণ্টা চলতে সক্ষম।
ব্যাটারির রেটিং দুই ভাবে প্রকাশ করা হয়। (ক) ভোল্টেজ রেটিং এবং (খ) কারেন্ট রেটিং
কারেন্ট রেটিংঃ কোন নির্দিষ্ট হারে ব্যবহৃত সময়ে কারেন্ট সরবরাহের ক্ষমতাকে ব্যাটারীর কারেন্ট রেটিং বলে। ইহা ব্যাটারির গঠন এর উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ সেলে ব্যবহৃত এ্যাকটিভ পদার্থের পরিমাণ ও গুণাগুণের উপর নির্ভর করে। ভোল্টেজ রেটিংঃ কোন নির্দিষ্ট হারে ব্যবহৃত সময়ের জন্য ভোল্টেজ সরবরাহের ক্ষমতাকে ব্যাটারির
ভোল্টেজ রেটিং বলে। ইহা ব্যাটারিতে ব্যবহৃত এ্যাকটিভ পদার্থের ধরণ ও গুণাগুণের উপর নির্ভর করে।
ব্যাটারির ক্যাপাসিটি বা ক্ষমতা অ্যাম্পিয়ার আওয়ারে প্রকাশ করা হয়। চার্জযুক্ত একটি ব্যাটারি যে পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি (অ্যাম্পিয়ার আওয়ার) সরবরাহ করতে সক্ষম তাকে ব্যাটারির ক্যাপাসিটি বলে। অর্থাৎ কোন ব্যাটারি প্রতি ঘণ্টায় যত অ্যাম্পিয়ার সরবরাহ করতে পারে সেটাই ঐ ব্যাটারির ক্ষমতা। ইহাকে AH দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ১০ ভোল্ট, ১২.০ অ্যাম্পিয়ার ক্যাপাসিটির একটি ব্যাটারি ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে সক্ষম হলে তার রেটিং হবে, ১০ ভোল্ট, ১২০ অ্যাম্পিয়ার আওয়ার ।
ব্যাটারির ক্যাপাসিটি যে বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে: ব্যাটারির ক্ষমতা নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে-
(ক) প্লেটের সাইজের উপর
(খ) প্রতি সেলে প্লেটের সংখ্যার উপর
(গ) এসিডের পরিমাণ ও ঘনত্বের উপর
(ঘ) তাপমাত্রার উপর
(ঙ) ডিসচার্জ হারের উপর।
প্রতিটি বৈদ্যুতিক সেলে উৎপাদিত ডিসি ভোল্টেজের পরিমাণ সীমিত। বেশি পরিমাণের প্রয়োজনীয় ডিসি ভোল্টেজ পেতে এবং কারেন্ট ক্যাপাসিটি বাড়াতে সেলের সংযোগ বা গ্রুপিং করা হয়। সেল গ্রুপিং এর প্রয়োজনীয়তা, প্রকার ভেদ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সেল সংযোগ : অনেক ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক সিস্টেমে ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য কতকগুলো বা প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেলকে নিয়ম অনুযায়ী একত্রে সংযোগ করার প্রয়োজন হয়। একে সেলের সংযোগ বলে। সেলের এরূপ সংযোগকে একত্রে ব্যাটারি বলা হয়। ভোল্টেজ বৃদ্ধি, কারেন্ট বৃদ্ধি বা ভোল্টেজ ও কারেন্ট উভয়ই বৃদ্ধির চাহিদার উপর নির্ভর করে সেলের সংযোগ করা হয় ।
৩.৩ সেল সংযোগের শ্রেণিবিভাগ - সেলকে তিনভাবে সংযোগ বা গ্রুপিং করা যায়-
ক) সিরিজ সংযোগ, থ) প্যারালাল সংযোগ এবং গ) সিরিজ- প্যারালাল বা মিশ্র সংযোগ।
৩.৩.১ সেল সংযোগের প্রয়োজনীয়তা: সেলের সিরিজ সংযোগে ভোল্টেজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, আর প্যারালাল সংযোগে কারেন্ট এবং মিশ্র সংযোগে ভোল্টেজ ও কারেন্ট উভয়ই বৃদ্ধি পায়। লোডের প্রয়োজন অনুযায়ী বা ব্যবহারিক ক্ষেত্র অনুসারে সেলের প্রয়োজনীয় সংযোগ করে ব্যাটারি তৈরি করা হয়। প্রতিটি ড্রাই সেলের ইএমএফ ১.৫ ভোল্ট, নিকেল ক্যাডমিয়াম সেলের ইএমএফ ১.৪ ভোল্ট এবং লিড এসিড সেলের ইএমএফ ২.০ ভোল্ট হয়। আর অ্যাম্পিয়ার ক্যাপাসিটি সীমিত। ব্যবহারিক ক্ষেত্রের প্রয়োজন অনুসারে কতকগুলো সেলকে নিয়ম অনুযায়ী (সিরিজ বা প্যারালাল বা মিশ্র) সংযোগ করে ভোল্টেজ ও অ্যাম্পিয়ার ক্যাপাসিটি বাড়াতে সেলের সংযোগ করা হয়। কারেন্ট বৃদ্ধিতে সেলের প্যারালাল সংযোগ আর ভোল্টেজ বৃদ্ধিতে সিরিজ সংযোগ করা হয়। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সেলের সংযোগ বা গ্রুপিং খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৩.৩.২ সেলের সিরিজ সংযোগ (Series Grouping of Cell): যখন সেলগুলোর মধ্যে ১ম টির ঋণাত্মক
প্রাপ্ত ২য় টির ধণাত্মক প্রান্তের সাথে আবার ২য় টির ঋণাত্মক প্রান্ত ৩য় টির ধণাত্মক প্রান্তের সাথে এভাবে পর পর সংযোগ করা হয়, তখন সেলগুলোর এরূপ সংযোগকে সিরিজ সংযোগ বলে। ৩.২০ নং চিত্রে সেলের সিরিজ সংযোগ দেখানো হয়েছে।
৩.৩.৩ সেলের সিরিজ সংযোগের গুরুত্ত্ব : প্রায় সকল ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদি / যন্ত্রপাতির ডোস্টেজ রেটিং বেশি থাকে। বাজারে প্রাপ্ত সেলের ভোল্টেজ ১.৫ ভোল্ট। বেশি ভোল্টেজ রেটিং এর যন্ত্রপাতি চালাতে বেশি ডোস্টেজের ব্যাটারি প্রয়োজন হয়। সেলের সিরিজ সংযোগে ব্যাটারির ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়। লোডের প্রয়োজন অনুযায়ী ভোল্টেজ বাড়াতে সেলের সিরিজ সংযোগ করা হয়। এ সংযোগে কারেন্ট ক্যাপাসিটি একই থাকে অর্থাৎ সার্কিটে প্রবাহিত কারেন্ট প্রতিটি সেলের সমান হয়। লোডের ভোল্টেজ বেশি প্রয়োজন হলে সেলের সিরিজ সংযোগে ব্যাটারি তৈরি করা হয় ৩.২০ নং চিত্র অনুযায়ী প্রতিটি ১.৫ ভোল্ট এর সেল সিরিজে সংযুক্ত করায় আউটপুটে ৬.০ ভোল্ট পাওয়া যায়। নিচের চিত্র ৩.২১ তে লোডসহ n সংখ্যক সেলের সিরিজ গ্রুপিং দেখানো হলো।
ধরি, সিরিজে সংযুক্ত প্রতিটি সেলের
ইএমএফ =B
প্রতিটি সেলের অভ্যন্তরীণ রোধ =r
সংযুক্ত লোডের রোধ = R
তড়িৎ প্রবাহ = I
এবং সংযুক্ত সেল সংখ্যা = n
তাহলে সিরিজে সংযুক্ত সেলের ই এম এফ = nE
বর্তনীর অভ্যন্তরীণ রোধ = nr
বর্তনীর মোট রোধ = R + nr
বর্তনীতে প্রবাহিত কারেন্ট,
সবই প্রচলিত অর্থ বহন করে এবং সাধারণ এককে প্রকাশিত। সেলের অভ্যন্তরীণ রোধ কম হলে সেলের সিরিজ সংযোগ বেশি কার্যকরী হয়।
যখন কতকগুলো সেলের পজেটিভ বা ধণাত্মক প্রান্তকে এক বিন্দুতে এবং নেগেটিভ বা ঋণাত্মক প্রান্তগুলো অন্য আর এক বিন্দুতে সংযোগ করা হয়, তখন তাকে সেলের প্যারালাল সংযোগ বলে। প্যারালালে সংযুক্ত সেনসমূহের ইএমএফ একই হওয়া আবশ্যক। তা না হলে লোডে সংযুক্ত না করলেও ব্যাটারির ক্ষমতা কমে যাবে। চিত্র- ৩.২২ এ সেলের প্যারালাল সংযোগ দেখানো হয়েছে।
আমরা যে সমস্ত ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করি সেগুলোর ভোল্টেজ রেটিং ও কারেন্ট রেটিং একই হয় না। লোডের প্রয়োজন অনুযায়ী কারেন্ট প্রবাহ বাড়াতে সেলের প্যারালাল সংযোগ করা হয়। অর্থাৎ যে সমস্ত যন্ত্রপাতির জন্য বেশি কারেন্ট প্রয়োজন হয় সে সমস্ত যন্ত্রপাতি পরিচালনায় সেলের প্যারালাল সংযোগ একান্ত প্রয়োজন। সেলের প্যারালাল সংযোগে ব্যাটারির ভোল্টেজ একই থাকে এবং কারেন্ট প্রবাহ বৃদ্ধি পায়; অর্থাৎ সার্কিটের ভোল্টেজ প্রতিটি সেলের সমান হয়। লোডের ক্ষমতা অনুযায়ী কারেন্ট প্রবাহ বাড়াতে সেলের প্যারালাল সংযোগ করা হয়। সেলের প্যারালাল সংযোগে প্রতিটির ইএমএফ বা বিভব পার্থক্য একই হওয়া প্রয়োজন। এ সংযোগে প্রবাহিত মোট কারেন্ট সবগুলো সেনের কারেন্টের যোগফলের সমান। অর্থাৎ ব্যাটারির কারেন্ট ক্যাপাসিটি বাড়ে। দীর্ঘ সময় চালানোর জন্য সেলের প্যারালাল সংযোগ করা হয়। লোডের কারেন্ট বেশি প্রয়োজন হলে প্যারালাল সংযোগে ব্যাটারি তৈরি করা হয়।
নিচে চিত্র নং ৩.২৩-তে সেলের প্যারালাল সংযোগ দেখানো হয়েছে।
ধরি, প্যারালাল সংযুক্ত প্রতিটি সেলের ই এম এফ = E
প্রতিটি সেলের অভ্যন্তরীণ রোধ = r
সংযুক্ত লোডের রোধ = R,
তড়িৎ প্রবাহ = I এবং
সংযুক্ত সেল সংখ্যা = n
তাহলে, সেলগুলোর সংযোগে ব্যাটারির ইএমএফ =E (যেহেতু সেলগুলো প্যারালালে সংযুক্ত)
বর্তনীর অভ্যন্তরীণ রোধ
৩.৩.৬ সেলের সিরিজ-প্যারালাল বা মিশ্র সংযোগ :
Read more